,

মধুমতি নদীর তীব্র ভাঙ্গনে চারটি গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার সর্বশান্ত

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি:ইছাখালী গ্রামের ওসমান সিকদার, বয়স প্রায় ৫০ বছর। মধুমতি নদীর তীব্র ভাঙ্গনে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে তার ৫ বিঘা জমি। স্ত্রী ও তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে সমান্য বসত ভিটায় রয়েছেন। তাও এখন নদী গর্ভে চলে যাওয়ার আশংকায় দিন পার করছেন। নিজ জমি নদী গর্ভে চলে যাওয়ায় এখন পরের জমিতে কৃষি কাজ করে চালাচ্ছে সংসার। তারই মত একই দশা ইছাখালি গ্রামের জাকির সিকদার, আক্তর শেখ, লুৎফর সিকদারের। তারাও আতংকে রয়েছে কখন তাদের ফসলি জমি নদী গর্ভে চলে যায়।

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের চারটি গ্রামে মধুমতি নদীতে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙ্গন। ইতিমধ্যে মধুমতি নদীর ভাঙ্গনে কয়েক’শ বিঘা ফসলি জমি, স্কুল, খেলার মাঠ, মকতব, বসতবাড়ী নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। তবে বিলম্বে হলেও ভাঙ্গন প্রতিরোধ ও স্থায়ী তীর সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

ইছাখালিসহ কয়েকটি গ্রামে গিয়ে জানাগেছে, এ বছরের শুরুতেই সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের ডুবসি, ইছাখালি, চরঘোষাল, ও ঘাঘাধলইতলা গ্রামের মধুমতি নদীতে দেখা দেয় তীব্র ভাঙ্গন। ইতিমধ্যে ডুবসি মোল্লাপাড়া রেজি: প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইছাখালি মোল্লাপাড়া জামে মসজিদ, দুই শতাধিক বসত বাড়ী, কয়েকশ বিঘা ফসলি জমি, বিদ্যালয়, গাছ পালা, বিদ্যুতের খুটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে সর্বশান্ত হয়ে খোলা আকাশের নিচে ও পরের জমিতে বসবাস করতে হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্থদের।

এদিকে, ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বসত ঘর ও মালামাল বাঁচাতে এসব পরিবার ৩ থেকে ৪ বার বসতবাড়ী পরিবর্তন করে অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন নদীরক‚লের এসব বাসিন্দারা। এপাড়ে ভেঙ্গে নড়াইলের পাড়ে গড়ে তোলে চর। আর সেখানে এসব ভাঙ্গনকবলিত মানুষ গড়ে তোলে বসত ঘর। সেই সাথে কয়েক’শ টিউবয়েলও চলে গেছে নদী গর্ভে। ফলে এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। খাল বা বিলের পানি পান করতে হচ্ছে তাদের।

মো: চয়ন সিকদার জানান, বিগত কয়েক বছরে নদী ভাঙ্গনে প্রায় আড়াই পরিবার তাদের বসত ভিটা হারিয়েছেন। নড়াইলে ওপারে চর জাগায় এসব পরিবার আরারো ওই স্থানে বসতি গড়েছেন। সরকার যদি নদী ভাঙ্গনরোধ ব্যবস্থা নেয় তাহলে এলাকার মানুষ তাদের বসত বাড়ী, ফসলি জমি হারানো থেকে রেহাই পাবে।

জাকির সিকদার বলেন, নদী ভাঙ্গনে বাড়ী ঘর, মসজিদ, মকতব, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদী গর্ভে চলে গেছে। বসত ভিটা হারিয়ে আমরা এখন নি:স্ব। পরের জমিতে কোন রকমে ঠাই হয়েছে আমাদের। দ্রুত ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো দিকে নজর দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি।

আক্তার শেখ বলেন, নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়ে কয়েকশ টিউবয়েল নদী গর্ভে চলে গেছে। ফলে ভাঙ্গনকবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। আমাদের খাল, বিল বা পুকুরের পানি পান করতে হচ্ছে।

কৃষক কামরুল হাসান বলেন, ভাঙ্গনের হুমকীর মুখে পড়া জমিগুলোতে এই মুহুর্তে পাট ও রবিশস্য রয়েছে। জমিগুলো ভাঙ্গনের হাত থেকে বাঁচানো না গেলে চলতি বছরই কৃষকরা চরম অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বে।

এ ব্যাপারে গোপালগঞ্জ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ বৈদ্য বলেন, মধুমতি নদীর ভাঙ্গনরোধে ইতিমধ্যে ৫০০ মিটার জায়গা ডিপিপি‘র অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে এবং তা একনেকে অনুমোদনের অপক্ষোয় আছে। ডিপিপি অনুমোদন হলে আমরা ভাঙ্গনকবলিত এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মানের কাজ করতে পারব। এছাড়া অনান্য স্থানে যে সব ভাঙ্গন আছে তা ডিপিপর অন্তর্ভূক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। তাছাড়া আমরা জরুরীভাবে জিও ব্যাগ ফেলে ডাম্পিং করে ভাঙ্গনরোধ করার পদক্ষেপ গ্রহন করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর